প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ শেষ হলো শারদীয় দুর্গাপূজা

 

নোয়াখালীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আজ প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো। সারা দেশের মতো নোয়াখালী জেলাতেও দিনটি ছিল অত্যন্ত আনন্দঘন ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ভরপুর। ভক্তরা সকালে মণ্ডপে এসে দেবী দুর্গার শেষ পূজা ও প্রার্থনা করেন এবং বিকেলে মহাদশমীর ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলা ও শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে দেবীকে বিদায় জানান।

নোয়াখালীতে এবছর মোট ১৮২টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়, যা জেলাবাসীর মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে। প্রতিটি মণ্ডপ সেজেছে বর্ণিল আলোকসজ্জা এবং ধর্মীয় প্রতীকচিহ্নে, যা পূজার ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। মণ্ডপগুলোতে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভক্তদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, দেবী দুর্গার পূজা, অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে ভক্তরা পূজার দিনগুলো উদযাপন করেন।

বিসর্জন অনুষ্ঠানের বিবরণ

আজ মহাদশমী উপলক্ষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার মর্ত্য থেকে কৈলাসে ফিরে যাওয়ার প্রতীকী যাত্রা শুরু হয়। সকালে পূজার শেষ পর্ব শেষ হওয়ার পর শুরু হয় সিঁদুর খেলার আয়োজন। সিঁদুর খেলা মূলত বিবাহিত নারীদের জন্য একটি বিশেষ আচার, যেখানে তারা একে অপরের সঙ্গে সিঁদুর আদান-প্রদান করেন। এটি মঙ্গল কামনার প্রতীক হিসেবে পালন করা হয় এবং দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

বিকেলের দিকে মণ্ডপ থেকে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন করা হয়। নোয়াখালীর বিভিন্ন স্থানে মিছিলের মাধ্যমে প্রতিমাগুলো নদী বা জলাশয়ে নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা ঢাকের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি এবং ধর্মীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করেন। ভক্তদের চোখে ছিল বিদায়ের বেদনামাখা আবেগ, কারণ এই বিসর্জন দেবী দুর্গার প্রতি তাদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ।

নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা

শারদীয় দুর্গাপূজার বিসর্জন উপলক্ষে নোয়াখালীতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত টহল দিয়েছে এবং মণ্ডপ ও বিসর্জনস্থলগুলোতে কড়া নজরদারি রেখেছে, যাতে কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। নোয়াখালী জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন থেকে জানানো হয়, এ বছর পূজা উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে এবং আনন্দঘন পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন ভক্তদের নিরাপদ বিসর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে।

উৎসবের প্রতিফলন ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

শারদীয় দুর্গাপূজার বিসর্জন অনুষ্ঠান স্থানীয় জনগণের জন্য একদিকে যেমন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সমাপ্তি, অন্যদিকে এটি আশারও প্রতীক। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, দেবী দুর্গা প্রতি বছর তাদের সুরক্ষা এবং আশীর্বাদ নিয়ে মর্ত্যে আসেন এবং দশমীর দিন বিসর্জনের মাধ্যমে তিনি কৈলাসে ফিরে যান। তাই প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানে ভক্তদের মাঝে বিদায়ের বিষাদের পাশাপাশি আগামী বছরের পূজার জন্য নতুন প্রত্যাশা দেখা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা রতন চন্দ্র দাস বলেন, "প্রতিবছর দুর্গাপূজা আমাদের জীবনে আনন্দ ও মিলনের বার্তা নিয়ে আসে। বিসর্জনের মুহূর্তটি অত্যন্ত আবেগঘন, কিন্তু আমরা জানি, দেবী আগামী বছর আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।" আরেকজন ভক্ত, মিনা রাণী দত্ত, বলেন, "সিঁদুর খেলার আনন্দ এবং শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা দেবীকে বিদায় জানাই, তবে মনটা খারাপও লাগে। আগামী বছর দেবী আরও ভালো সময় নিয়ে আসবেন, এই আশায় থাকি।"

দুর্গাপূজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব

নোয়াখালীসহ সারা বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য দুর্গাপূজা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনেরও একটি প্রধান মাধ্যম। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সমাজের সব স্তরের মানুষের মধ্যে একত্রিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। পূজার সময় যাত্রা, নাটক, সংগীত, এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে স্থানীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। এছাড়াও, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পূজার সময়ে ভালো বাণিজ্য করে থাকেন, যা অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সমাপ্তি ভাবনা

দুর্গাপূজার বিসর্জন দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। তবে এটি ভক্তদের মনে রেখে যায় এক অসাধারণ আনন্দময় এবং আবেগঘন অভিজ্ঞতা, যা তাদের আগামী বছর পর্যন্ত পূজার নতুন উদ্দীপনা এবং আশার সঙ্গে বাঁচতে অনুপ্রাণিত করে।

Post a Comment

0 Comments