যেসব দেশে ও অঞ্চলে সমলিঙ্গের বিবাহ বৈধ

 

**যেসব দেশে ও অঞ্চলে সমলিঙ্গের বিবাহ বৈধ, সেখানে কতগুলো বিবাহ সমলিঙ্গের? | পিউ রিসার্চ সেন্টার**

বিশ্বজুড়ে সমলিঙ্গের বিবাহ বৈধকরণের হার গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে, ৩০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চল সমলিঙ্গের বিবাহকে আইনগতভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, পিউ রিসার্চ সেন্টার বিভিন্ন দেশে সমলিঙ্গের বিবাহের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করেছে এবং বৈধতার পরিপ্রেক্ষিতে কতগুলো বিবাহ সমলিঙ্গের হচ্ছে তা তুলে ধরেছে।

বিশ্বজুড়ে সমলিঙ্গের বিবাহের বৈধকরণ**

২০০১ সালে নেদারল্যান্ডস প্রথম দেশ হিসেবে সমলিঙ্গের বিবাহ বৈধ করে, যা বিশ্বজুড়ে এলজিবিটিকিউ+ অধিকারের ক্ষেত্রে একটি বিশাল পরিবর্তনের সূচনা করে। এরপর, ইউরোপ, আমেরিকা এবং ওশেনিয়ার অনেক দেশ সমলিঙ্গের বিবাহকে বৈধতা দেয়। সম্প্রতি, সুইজারল্যান্ড ২০২১ সালে এবং চিলি ২০২২ সালে সমলিঙ্গের বিবাহ বৈধ করেছে।

সমলিঙ্গের বিবাহের হার**

যেসব দেশে সমলিঙ্গের বিবাহ বৈধ, সেখানে মোট বিবাহের একটি ছোট অংশ সমলিঙ্গের বিবাহ। বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী:

নেদারল্যান্ডস**, যেখানে সমলিঙ্গের বিবাহের দীর্ঘতম ইতিহাস রয়েছে, সেখানে মোট বিবাহের প্রায় ২.৫-৩% সমলিঙ্গের বিবাহ হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র**, যেখানে ২০১৫ সালে সমলিঙ্গের বিবাহ সর্বত্র বৈধ হয়, ২০২২ সালের মধ্যে সেখানে প্রায় ১১ লাখ সমলিঙ্গের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটি দেশের মোট বিবাহের প্রায় ৫% এরও কম।

কানাডা**, যেখানে ২০০৫ সালে সমলিঙ্গের বিবাহ বৈধ হয়, প্রতি বছর প্রায় ২-৩% বিবাহ সমলিঙ্গের।

অন্যান্য দেশে যেখানে সমলিঙ্গের বিবাহ বৈধ, সেখানেও অনুরূপ প্রবণতা দেখা যায়। সমলিঙ্গের বিবাহের সংখ্যা সাধারণত মোট বিবাহের একটি ছোট অংশ নিয়ে থাকে, যা এলজিবিটিকিউ+ জনসংখ্যার সংখ্যা এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন।

সমলিঙ্গের বিবাহের হার প্রভাবিতকারী কারণ

কয়েকটি মূল কারণ সমলিঙ্গের বিবাহের হারে প্রভাব ফেলে:

1.সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা: যেসব দেশে এলজিবিটিকিউ+ মানুষদের প্রতি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বেশি, সেখানে সমলিঙ্গের বিবাহের হারও বেশি। উদাহরণস্বরূপ, কানাডা এবং নেদারল্যান্ডসে সমলিঙ্গের বিবাহের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।

2. সাংস্কৃতিক মনোভাব: যেসব দেশে রক্ষণশীল বা ধর্মীয় বিশ্বাস দৃঢ়, সেখানে আইনি বৈধতা থাকা সত্ত্বেও সমলিঙ্গের বিবাহের হার কম থাকে। যেমন, স্পেন এবং পর্তুগালে সমলিঙ্গের বিবাহ বৈধ হলেও, সামাজিকভাবে স্বীকৃতি কম থাকায় বিবাহের হার কম।

3. আইনি ও আর্থিক সুবিধা: যেসব দেশে বিবাহের মাধ্যমে আইনগত সুবিধা যেমন কর ছাড়, দত্তক নেওয়ার অধিকার, এবং সঙ্গীর জন্য আর্থিক সুরক্ষা পাওয়া যায়, সেসব দেশে সমলিঙ্গের বিবাহের হার বেশি হতে দেখা যায়।

4. জনসংখ্যার আকার: বড় দেশগুলিতে এলজিবিটিকিউ+ জনসংখ্যা বেশি থাকায় সেখানে সমলিঙ্গের বিবাহের সংখ্যাও বেশি। ছোট দেশ বা অঞ্চলে, যেখানে জনসংখ্যা কম, সেখানে সমলিঙ্গের বিবাহের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।

আঞ্চলিক বৈচিত্র্য

সমলিঙ্গের বিবাহের সংখ্যায় আঞ্চলিক পার্থক্যও লক্ষণীয়:

ইউরোপ: নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, এবং স্পেনের মতো দেশগুলোতে সমলিঙ্গের বিবাহের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে সমলিঙ্গের বিবাহ এখনো অবৈধ বা কম গ্রহণযোগ্য হওয়ায় বিবাহের হারও কম।

উত্তর আমেরিকা: যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা উভয় দেশেই সমলিঙ্গের বিবাহের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৫ সালের পর থেকে সমলিঙ্গের বিবাহের সংখ্যা বাড়ছে।

ল্যাটিন আমেরিকা: আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের মতো দেশে সমলিঙ্গের বিবাহ বৈধ হলেও বিভিন্ন অঞ্চলে সমলিঙ্গের বিবাহের হার ভিন্ন। কিছু অঞ্চলে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায় শক্তিশালী হওয়ায় বিবাহের হার বেশি।

এশিয়া এবং আফ্রিকা: এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ এবং প্রায় সব আফ্রিকান দেশে সমলিঙ্গের বিবাহ এখনো অবৈধ। তবে ২০১৯ সালে তাইওয়ান এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে সমলিঙ্গের বিবাহ বৈধ করে, এবং ২০২২ সালের মধ্যে সেখানে ৭,০০০ এর বেশি সমলিঙ্গের বিবাহ নিবন্ধিত হয়েছে। আফ্রিকায় একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকা সমলিঙ্গের বিবাহ বৈধ করেছে, তবে সেখানে সামাজিক বাধার কারণে বিবাহের হার কম।

ভবিষ্যৎ প্রবণতা

যত বেশি দেশ সমলিঙ্গের বিবাহকে বৈধতা দিচ্ছে, ততই বিশ্বজুড়ে এই বিবাহের সংখ্যা বাড়ছে। তবে এর বৃদ্ধির হার অনেকাংশে নির্ভর করবে সামাজিক মনোভাব, এলজিবিটিকিউ+ অধিকারের প্রতি জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আইনি সুরক্ষার ওপর। যেসব দেশে এলজিবিটিকিউ+ অধিকার বেশি স্বীকৃত, সেখানে সময়ের সাথে সাথে সমলিঙ্গের বিবাহের হার আরও বাড়তে পারে।

সারসংক্ষেপে, যেসব দেশে সমলিঙ্গের বিবাহ বৈধ, সেখানে এটি মোট বিবাহের তুলনায় একটি ছোট অংশ হলেও এটি বৈষম্য কমানোর এবং এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের প্রতি সমতার প্রতীক।

Post a Comment

0 Comments